ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্য সব বাজারের মতো ক্রেতারা পছন্দমতো কিনছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তবে সবগুলো পণ্যের দাম মিলিয়ে ৭০০ টাকা হলেও রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা। অবাক হলেও মুন্সিগঞ্জে দেখা মিললো এমনই এক ব্যতিক্রম ইফতার বাজারের।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া এলাকায় বসে এই ‘১০ টাকায় ইফতার বাজার’। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন আয়োজন করে এই কর্মসূচির।অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে এক কেজি সয়াবিন তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারের ৭টি পণ্য কেনেন নিম্ন আয়ের ২১০টি পরিবার। এমন আয়োজনে অসহায় মানুষগুলোর মুখে ফোটে তৃপ্তির হাসি।
রাউৎভোগ এলাকার রোকসানা বেগম (৬০) বলেন, ‘পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনে খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কত কিছু কিনে নিলাম। যা দিয়া বাকি রমজানগুলো কাটিয়ে দিতে পারমু।দিঘীরপাড় গ্রামের নাছিমা বেগম (৩৫) বলেন, বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা, সেখানে ৭টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। এখানে এসে মনে হলো বাপ-দাদার আমলের বাজার থেকেই পণ্য নিচ্ছি। রোজার বাকি দিনগুলো ভালোভাবে কাটবে।
সংগঠনের সদস্য রিয়া মনি বলেন, গত বছরের মতো এবছরও আমরা ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করেছি। এ বাজার থেকে নিম্নবিত্ত ২১০টি পরিবার বাজার করেন।তিনি আরও বলেন, চাইলে ইফতারসামগ্রীগুলো বিনামূল্যে তাদের দেওয়া যেত। তবে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা চান, তারা সামান্য মূল্যে ক্রয় করুক। এতে তাদের আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে। পাশাপাশি বাজার থেকে ক্রয় করার মতো একটি অনুভূতিও পাবেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এই অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে এই বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। তবে আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।
সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ সহায়তা পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাসি দেখে আনন্দিত হয়েছি।
Leave a Reply