জন্মগতভাবেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। দুই হাঁটুতে ভর করে চলতে হয় তাকে। এতকিছুর পরও থেমে থাকেননি, চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা। শুধু তাই নয়, নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালান। অর্ধশতাধিক পরিবারের বিদ্যুৎ বিল ব্যাংকে জমা দিয়ে বকশিশের টাকায় চলে তার পড়ার খরচ।
বলছিলাম পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের জসিম ফকির-চম্পা দম্পতির ছেলে চাঁদের কথা। বাবা জসিম ফকির ইট ভাটার শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। এতে করে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। চাঁদ ছাড়াও তার রয়েছে তিন সন্তান। শত কষ্টের পরও জসিম ফকির তার ছেলেদের অন্যের বাড়ি কাজে না দিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গছে, চাঁদ জন্মগতভাবেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার পা দুটো বাঁকা ও শক্তিহীন। তাকে চলতে হয় হাঁটুর উপর ভর দিয়ে। এমনকি দুই হাতেও তেমন শক্তি পান না তিনি। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য নিজের বুদ্ধিতে একটি কাজ যোগাড় করে নিয়েছেন চাঁদ। লোকজনের সহযোগিতায় একটি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার সাইকেলের ব্যবস্থা করেছেন। সেটিতে চড়ে অর্ধশত বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকা তোলেন। এরপর তা নিকটস্থ ব্যাংকে গিয়ে জমা দেন। এতে প্রত্যেক গ্রাহক তাকে মাসে ১০ টাকা করে দেন। এভাবে যে টাকা পান, তা দিয়েই চলে তার পড়াসহ অন্যান্য খরচ।চাঁদ বলেন, ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমি থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পাস করেছি। চলতি শিক্ষাবর্ষে ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ডিজিটাল টেনকোলজি ইন বিজনেস ট্রেডে ভর্তি হয়েছি। ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে আমার।ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, চাঁদের মতো বহু প্রতিবন্ধী ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু চাঁদ ব্যতিক্রম। সে নিজের আয় করা টাকা দিয়ে পড়াশোনা করছে। চাঁদ আমাদের এ সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ বদরুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধী চাঁদ বাবুর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ । তাকে কলেজের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার পাশে বিত্তবান ও হৃদয়বানরা একটু দাঁড়ালে তার কষ্ট কমতো।এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, শারীরিক ও সাংসারিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছেন চাঁদ। পড়ালেখার জন্য তার চেষ্টা প্রশংসাযোগ্য। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পড়ালেখার বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। সবার সহযোগিতা থাকলে তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।
Leave a Reply