কুড়িগ্রামে পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন পারভেজ মোশাররফ (১৯) নামের এক কলেজছাত্র। শুধু তাই নয়, অভিনব এ প্রক্রিয়া থেকে উৎপাদিত ডিজেল ও পেট্রল বিক্রি করে বাড়তি আয়ও হচ্ছে তার। প্রতি লিটার পেট্রল ১০০ টাকা ও ডিজেল ৬০ টাকা দরে কিনছেন গ্রাহকরা।
পারভেজ মোশাররফ ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে। তিনি ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।জানা গেছে, পারভেজ মোশাররফ ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী। ইউটিউবে পরিত্যক্ত পলিথিন রিসাইকেল করে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আগ্রহ জাগে তার। পরে নিজ বাসায় ২০১৯ সালে সরঞ্জামাদি কিনে শুরু করেন ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদনের কাজ। ওই সময় আর্থিক সংকটের কারণে তেল উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেল ডিজেল ও পেট্রলের দাম বেশি হওয়ায় আবার শুরু করেন উৎপাদন প্রক্রিয়া। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে উদ্ভাবনী এ কাজের পরিধি আরো বাড়ানোর ইচ্ছা তার।পেট্রল ও ডিজেল উৎপাদন করতে প্রযুক্তি হিসেবে একটি রিফাইনারি মেশিনের দরকার পড়ে। স্বল্প পরিসরে উৎপাদন করতে বাড়িতেই রিফাইনারি মেশিন তৈরি করা যায়। তবে কম খরচে টিনের তৈরি ড্রাম, লোহা ও প্লাস্টিকের পাইপ, প্লাস্টিকের বয়াম ও কয়েকটি বোতল দিয়ে এই রিফাইনারি মেশিন বানিয়েছেন তিনি।
এই প্রযুক্তিতে ড্রামের ভেতর পলিথিন রেখে তা আগুনের তাপে গলিয়ে বাষ্পের মাধ্যমে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন করা সম্ভব।তিনি বলেন, এক কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৭৫০ গ্রাম জ্বালানি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৩০০ গ্রাম পেট্রল আর ৪৫০ গ্রাম ডিজেল। এটি অত্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি। সরকার যদি প্রতিটি জেলায় তেল পরিশোধন মেশিন দিয়ে সহায়তা করে তাহলে আমার মতো অনেক যুবকই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।তিনি আরো বলেন, পরিত্যক্ত পলিথিন পরিবেশ নষ্ট করার অন্যতম উপাদান হিসেবে জানি আমরা। কিন্তু পলিথিন রিসাইকেল করে যদি এভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে অন্যদিকে অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে।
স্থানীয় কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, মাঠে সেচের জন্য ডিজেলচালিত পাম্পে নতুন উৎপাদিত ডিজেল ব্যবহার করছি। আমার মতো অনেক কৃষকই এখন এই ডিজেল ব্যবহার করছেন। এটি দামে সাশ্রয়ী ও মানেও ভালো। তাই এলাকার কৃষকের কাছে এই ডিজেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান খন্দকার রতন বলেন, পলিথিনের এ ধরনের পুনঃব্যবহার পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনতে পারে। এটি একটি বিস্ময়কর প্রযুক্তি। এ ব্যাপারে সরকারের উচিত পারভেজের পাশে দাঁড়ানো। তথ্য ছবি সংগৃহীত।
Leave a Reply